ফের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল মোহনবাগান। ২০২৪-২৫ মরশুমে তারা ডাবল জিতে লিখল ইতিহাস। মুম্বই সিটি এফসি-র পর আইএসএলের দ্বিতীয় দল হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। গঙ্গাপারের ক্লাবে যখন আলোর রোশনাই, তখন অন্ধকারে ডুবে তাদের প্রতিবেশি ক্লাব ইস্টবেঙ্গল।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) মোহনবাগানের হিংসে করার মতোই সাফল্য, একের পর এক পালক যোগ হয়ে চলেছে তাদের মুকুটে। গত তিন মরশুমেই তারা টানা তিন বার আইএসএল ফাইনালে উঠেছে। দু'বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তবে একবার রানার্স হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এই তিন মরশুমে বাগান আবার দু'বার লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। সব মিলিয়ে সাফল্য যেন তাদের চুম্বন করে চলেছে।
উল্টোদিকে ইস্টবেঙ্গলের হাল একেবারে তথৈবচ। মোহনবাগানের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেওয়া, একে অপরকে ফালাফালা করে দেওয়া, বাগান কোনও সাফল্য পেলে, পাল্টা প্রত্যাবর্তন করা- সেই চেনা ইস্টবেঙ্গল এখন আর কোথায়? এক তরফা মোহনবাগানের দাপট। কলকাতার দ্বিতীয় প্রধানের দশা একেবারে ল্যাজেগোবরে। আইএসএল যবে থেকে খেলতে শুরু করেছে দুই প্রধান, সেই সময় থেকে-এ যদি পরিসংখ্যান দেখা যায়, তবে ফারাকটা পরিষ্কার হবে।
আরও পড়ুন: আল্ট্রাএজে স্পাইক, CSK অধিনায়ক হিসেবে প্রত্যাবর্তন ম্যাচেই ধোনির আউট নিয়ে শুরু বিতর্ক
আইএসএলে দুই দলের পারফরম্যান্সের ফারাক:
২০২০-২১ মরশুম থেকে আইএসএল খেলতে শুরু করে কলকাতার দুই প্রধান। যেখানে লিগ পর্বে মোহনবাগান দুইয়ে শেষ করেছিল, সেখানে নয় নম্বরে জায়গা পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সেবার মোহনবাগান ফাইনালে উঠলেও রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল।
এর পর ২০২১-২২ মরশুমে লিগ টেবলে তিনে শেষ করেছিল বাগান। আর পয়েন্ট টেবলে লাস্টবয় হয়েছিল লাল-হলুদ ব্রিগেড। এই মরশুমে সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিল মোহনবাগান।
২০২২-২৩ মরশুমে মোহনবাগান লিগ টেবলে তিনে শেষ করেছিল ঠিকই, তবে এই মরশুমে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আর ইস্টবেঙ্গল শেষ করেছিল সেই নয়ে।
২০২৩-২৪-এ আবার সবুজ-মেরুন ব্রিগেড লিগ শিল্ড জিতেছিল। তবে ফাইনালে হেরে রানার্স হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এবারও ইস্টবেঙ্গল শেষ করে নয়ে।
২০২৪-২৫ মরশুমে ফের লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মোহনবাগান। সেই সঙ্গে ট্রফিও জিতেছে তারা। ডাবল জিতে লিখেছে ইতিহাস। আর এবারও ইস্টবেঙ্গল শেষ করেছে নয়ে।
এখন প্রশ্ন হল, মোহনবাগানের তুলনায় বারবার কোথায় পিছিয়ে পড়ছে ইস্টবেঙ্গল? এই নিয়ে মুখ খুলেছেন লাল-হলুদের তিন প্রাক্তনী। কী বলছেন মেহতাব হোসেন, অ্যালভিটো ডি'কুনহা, দেবজিৎ ঘোষ?
মেহতাব হোসেন: এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা ইস্টবেঙ্গল এবং দলের সমর্থকদের জন্য। সত্যি তো এরকমটা আগে হয়নি যে, মোহনবাগান এক তরফা ভাবে সাফল্য পেয়ে চলেছে, অথচ ইস্টবেঙ্গলের সাফল্য তলানিতে। লাল-হলুদের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে আমার যেটা মনে হয়েছে, প্রতি বছর কোচ বদল, প্লেয়ার বদল করাটা ঠিক হচ্ছে না। আসলে একটা কোর টিম ধরে রাখতে হবে। কিছু বদল তো করতেই হবে। কিছু বিদেশি পরিবর্তন বা ভালো কোনও স্থানীয় অথবা দেশী প্লেয়ার পেলে, তাঁদের দলে নেওয়া, সব ঠিক আছে। কিন্তু প্রতি বছরই কার্যত পুরো টিম বদলে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। এর জেরে ধাক্কা খাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল। বার্সেলোনায় একটা সময়ে সব বড় বড় প্লেয়াররা যখন ছেড়ে যাচ্ছিল, তখন খুব খারাপ দশা হয়েছিল। তার পর ধীরে ধীরে তারা প্রত্যাবর্তন করে। আমিও আশাবাদী, ইস্টবেঙ্গল ঘুরে দাঁড়াবে। হয়তো এবার তারা কোচ বা কিছু প্লেয়ার ধরে রাখতে পারে। যেটা যে কোনও দলের কাছেই অক্সিজেন হয়। মোহনবাগান কিন্তু একটা কোর টিম ধরে রেখে, তার পর কিছু অদলবদল করে তারা।
আরও পড়ুন: RR-এর বৈভব সূর্যবংশীর বন্ধু কি CSK-তে রুতুর বিকল্প হতে চলেছেন? শুরু বড় জল্পনা
অ্যালভিটো ডি'কুনহা: গত কয়েক বছরের মধ্যে আমরা শুধু সুপার কাপ জিতেছি। মাত্র একটা ট্রফি। এটি খুবই হতাশার। তবে আমি মনে করি, অন্ধকারের পর দিনের আলো ফুটবে। মোহনবাগানের ইনভেস্টর ভালো, তারা যেভাবে টিমটা সাজাচ্ছে, সাফল্য পাচ্ছে। ইস্টবেঙ্গলের শুরু থেকে নির্দিষ্ট ইনভেস্টার নেই। বারবার বদলেছে, টিম করতে গিয়ে তার একটা তো প্রভাব পড়েছে। তবে এই মরশুমে টিমটা খারাপ ছিল না। কিন্তু রেজাল্ট আসেনি। আইএসএলের শুরুর দিকটা আরও একটু ভালো করতে পারলে, তবে হয়তো সুপার সিক্সে পৌঁছতে পারত ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সেটা হয়নি। যাইহোক আমরা সবাই তো প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নই দেখছি।
দেবজিৎ ঘোষ: আমার প্রথমেই যেটা মনে হয়, সেটা হল টিম বিল্ডিংয়ে প্রবলেম রয়েছে লাল-হলুদের। কোন প্লেয়ারকে সই করানো হবে, সেটা ঠিকঠাক বাছতে হবে, যেটা মোহনবাগান করছে। সবটাই খুব পরিকল্পনা করে করতে হবে। প্লেয়ারদের নেওয়া হচ্ছে কোন পজিশনে, কোথায় ফাঁক থাকছে, অঙ্ক কষে দল গড়ত হবে। এখন পরো সিস্টেমটাই বদলে গিয়েছে, আগের মতো নেই। প্রচুর টাকা খরচ করে টিম করা হচ্ছে। মোহনবাগানের জন্য মিস্টার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে টিম গড়ছেন। তাঁর একটাই পাখির চোখ, ট্রফি জিততে হবে। যে কারণে তিনি সেভাবেই টিম তৈরি করছেন। ইস্টবেঙ্গলের স্পনসর নিয়ে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। আর সব স্পনসরদের মিস্টার গোয়েঙ্কার মতো পজিটিভ মানসিকতাও থাকে না। তিনি যতটা ফুটবলের প্রতি আগ্রহী, সব স্পনসর তো সেটা হয় না। আইএসএলে টিম গড়তে বাজেট বড় বিষয়। তবে আমি বলব, লাল-হলুদকে সাফল্য পেতে হলে, ভালো বিদেশি ফুটবলার সই করাতেই হবে।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।