পহেলগাঁও হামলার জবাবে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে 'অপারেশন সিঁদুর’ স্ট্রাইক চালিয়েছে ভারত। যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌসেনা ও বায়ুসেনার সমন্বিত শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১৯ সালের বালাকোট অভিযানের পর এটিই ভারতের সবচেয়ে বড় সীমান্তবর্তী নির্ভুল হামলা।এই ত্রিস্তরীয় সামরিক অভিযানে একযোগে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯ জায়গায় জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।আর ভারত এই অভিযানে উচ্চ-নির্ভুলতা এবং দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হ্যামার বোমা, স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইল এবং লয়টারিং মিউনিশন। (আরও পড়ুন: জঙ্গি মরতেই মাথায় রক্ত পাকিস্তান, পুঞ্চে নির্বিচারে শেলিং,নিহত শিশু-মহিলা সহ বহু)
আরও পড়ুন-মধ্যরাতে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’, কী বলছেন রাষ্ট্রনেতারা
হ্যামার স্মার্ট বোমা শক্তিশালী পরিকাঠামো যেমন রিইনফোর্সড বাঙ্কার এবং লস্কর-ই-তৈবা ও জৈশ-ই-মুহাম্মদের প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বহুতল ভবন ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই নির্ভুল-নির্দেশিত, স্ট্যান্ডঅফ মিউনিশনটি লঞ্চের উচ্চতার উপর নির্ভর করে ৫০-৭০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। অন্যদিকে, স্ক্যাল্প একটি দীর্ঘ-পাল্লার, বায়ু থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্রুজ মিসাইল। এর পরিসীমা ২৫০ কিলোমিটারের বেশি এবং এটি গভীর হামলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য অস্ত্র হল লয়টারিং মিউনিশন। মূলত লুকিয়ে এলাকার পর নজরদারি চালানোর জন্য, কোথায় জঙ্গি ঘাঁটি রয়েছে, তাতে কী কী রয়েছে বা কারা-কতজন রয়েছে, তা জানতে এই যন্ত্র ব্যবহার করে সেনাবাহিনী। ড্রোনের মাধ্যমে ফুটেজ দেখে হামলার নির্দিষ্ট ছক করতে সক্ষম হয় ভারতীয় সেনা। (আরও পড়ুন: রাত ১.০৫ থেকে দেড়টা পর্যন্ত কী হয়? অপারেশন সিঁদুরের বিশদ জানাল সামরিক বাহিনী)
আরও পড়ুন: 'সন্ত্রাসীদের সাথে পাক যোগসূত্র উন্মোচিত', অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মুখ খুলল সরকার
অন্যদিকে অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের পর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, ‘আমাদের পদক্ষেপ ছিল মাপা, নির্দিষ্ট এবং কোনওভাবেই উস্কানিমূলক নয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কোনও ব্যবস্থাকেই নিশানা করা হয়নি। লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন এবং হামলা কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে।' রাজনাথ সিংয়ের মন্ত্রক জানিয়েছে, 'পহেলগাঁওয়ে ২৫ জন ভারতীয় এবং নেপালের একজন নাগরিকের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পাল্টা হিসেবেই এই পদক্ষেপ করা হল। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম এই হামলার নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদের এর মাশুল দিতে হবে, সেই প্রতিশ্রুতিই পূরণ করা হল।' পরে সংক্ষিপ্ত বার্তায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লেখেন, ‘ভারত মাতা কী জয়।’ (আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদ নিয়ে চোখে ঠুলি পড়ে থাকা চিনের দরদ উথলে পড়ল পাকিস্তানের জন্য)
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে নিয়ে হয় বিতর্ক, অপারেশন সিঁদুরের পর পহেলগাঁতে নিহত বিনয়ের মা বললেন...
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেছেন, 'ভারত মাতা কী জয়।' অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এক্স পোস্টে লিখেছেন, 'জয় হিন্দ।' অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, 'জয় হিন্দ! জয় হিন্দ কী সেনা!' শুধু কেন্দ্র বা বিজেপি নেতারা নয় এই পাকিস্তানের প্রত্যাঘাতের পর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে থেকে রাহুল গান্ধী, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব থেকে করে বিরোধী নেতারাও ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। (আরও পড়ুন: আমেরিকা পাশে থাক না থাক অপারেশন সিঁদুরের পর ভারত পেল দুই 'আসল বন্ধু')
শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এক্স বার্তায় বলেন, ‘তারা ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছে। এখন তোমার কর্মফল ভোগ করো। ভারতীয় সেনাবাহিনী।’শিবসেনা নেতা আদিত্য ঠাকরেও 'অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রশংসা করে বলেছেন, 'সকল ধরণের সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে হবে...তাদের উপর এমনভাবে আঘাত করো, যাতে সন্ত্রাসবাদ আর কখনও ফিরে না আসে। জয় হিন্দ!' অন্যদিকে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব বলেছেন, 'ভারতের জয় হোক! সন্ত্রাস বা বিচ্ছিন্নতাবাদ থাকা উচিত নয়! আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য গর্বিত।'
আরও পড়ুন: কেন অপারেশন সিঁদুরের জন্যে বেছে নেওয়া হয়েছিল বাহাওয়ালপুরকে? জানুন বিশদ তথ্য
অন্যদিকে, ভারতের প্রত্যাঘাতে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান সীমান্তে ফের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। অতিরিক্ত জন তথ্য পরিচালক (এডিজি পিআই) এক্স বার্তায় জানান, পাকিস্তান পুনরায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ভীম্বর গালি, পুঞ্চ-রাজৌরি অঞ্চলে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী যথাযথ জবাব দিয়েছে, তাও সংযতভাবে।