গাজায় ইজরায়েলি হামলা নিয়ে যখন সারা বিশ্ব সোচ্চার, ঠিক সেই আবহে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামার নামে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার বাংলাদেশে অবস্থিত একাধিক আউটলেটে উন্মত্ত যুবকদের হামলায় ক্ষুব্ধ মহম্মদ ইউনুসের কেয়ারটেকার সরকার। সেকথা সরাসরিই স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন ইউনুসের প্রতিনিধি খলিলুর রহমান। এমনকী, গাজার সঙ্গে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যার তুলনা করে তিনি বলেন, 'আমাদের ঘাড়ের উপর একটি গাজা বসে আছে! সেটি নিয়ে কারো মিছিল, মিটিং নেই!'
বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম অনুসারে - গাজায় ইজরায়েলি হামলা, অসংখ্য অবোধ শিশু-কিশোর-সহ বহু মানুষের মৃত্যুর প্রতিবাদে বাংলাদেশিদের একাংশও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু, প্রতিবাদের নামে মূলত যেটা হচ্ছে বলে অভিযোগ - তা হল - বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার স্থানীয় শাখাগুলিতে ভাঙচুর, হামলা, লুটপাট। তা সেই সংস্থার সঙ্গে সরাসরি ইজরায়েলের কোনও সম্পর্ক থাকুক, বা না থাকুক, হামলাকারীরা সেসব আমল দিচ্ছেন না বলেই অভিযোগ।
এদিকে, গত সোমবার থেকে (৭ এপ্রিল, ২০২৫) পাঁচদিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন চলছে ঢাকায়। যা শেষ হবে আগামী ১১ এপ্রিল। এই প্রেক্ষাপটে বারবার দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভাঙচুর, হামলার খবর আসায় কার্যত তিতিবিরক্ত ইউনুস প্রশাসন। তাদের আশঙ্কা, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসব দেখে অন্তত বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। তাতে আখেরে বাংলাদেশেরই ক্ষতি হবে।
এই প্রেক্ষাপটে গাজায় ইজরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা করলেও বহুজাতিক সংস্থাগুলির স্থানীয় আউটলেটে হামলার মতো ঘটনা মেনে নিতে পারেননি খলিলুর। একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, গাজার মতো পরিস্থিতিই তো বাংলাদেশের বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তৈরি হয়েছে। তাহলে তাঁদের স্বার্থরক্ষার দাবিতে কেন কোনও আন্দোলন হচ্ছে না?
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল, ২০২৫) ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে খলিলুর বলেন, 'একটা জিনিস লক্ষ করছি। যখনই আমরা একটা ভালো কাজ করতে গেছি, হঠাৎ করে নানারকম সমস্যার উদ্ভব হয়েছে! আমাদের ধারণা, আমাদের ভালো কাজগুলো ডিরেইলড করারই একটা চেষ্টা হিসাবে এটা করা হচ্ছে। এটা একটা প্যাটার্ন দাঁড়িয়েছে।'
গাজা ইস্য়ুতে তিনি বলেন, 'গাজায় ইজরায়েলের কর্মকাণ্ডে সারা বিশ্ব-বিবেক ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশেও তার প্রতিক্রিয়া হবে, খুবই স্বাভাবিক। আমার কাছে সবচেয়ে বেদনাদায়ক যেটা মনে হয়, আমাদের ঘাড়ের উপর একটি গাজা বসে আছে - রোহিঙ্গা। সেটি নিয়ে কারও মিটিং - মিছিল নেই, আলাপ - আলোচনা নেই।... (গাজা নিয়ে) রাস্তায় নামা, লুটপাট করা - এগুলি বন্ধ করতে হবে। আমাদের সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে।'
এই প্রসঙ্গেই রোহিঙ্গাদের স্বার্থরক্ষার পক্ষে সওয়াল করেন খলিলুর। তিনি বলেন, 'নাকি রোহিঙ্গারা একটু কম মুসলমান? আর অন্যরা একটু বেশি মুসলমান? আমার কিন্তু খুব লজ্জা লাগে, যখন বাইরের দেশে আমাকে জিজ্ঞাসা করে যে - আপনাদের দেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে তো কোনও কথাবার্তা নেই? আপনারা শুধু অন্য বিষয় নিয়ে কথা বলেন!'
গাজা নিয়ে প্রতিবাদ হলেও বাংলাদেশকে যে এই মুহূর্তে দেশের স্বার্থ এবং দেশের সমস্য়াগুলিকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, সেই বার্তাও দেন খলিলুর রহমান। বলেন, 'আমাদের অগ্রাধিকার আমাদেরই বুঝতে হবে। আমি সবাইকে আহ্বান করব, দেখুন, বাইরের কথা (গাজা)... আলাপ আপনি নিশ্চয়ই করবেন। কিন্তু ঘরের সমস্যা, এটা নিয়ে প্রথম দাঁড়িয়ে যাবেন। তা না হলে আমরা দেশের স্বার্থ রাখতে পারব না।'