প্রতি বছর চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে হনুমান জন্মোৎসব পালিত হয়। এই বছর হনুমান জয়ন্তী ২০২৫ সালের ১২ এপ্রিল। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, পবনপুত্র হনুমানজির জন্ম এই তিথিতে। এই দিনে, ভগবান বজরঙ্গবলীর বিশেষ পুজো করা হয়। ভারতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ একাধিক প্রাচীন হনুমান মন্দির রয়েছে।
বিশ্বাস করা হয় যে এমন কিছু মন্দির আছে যেখানে বজরঙ্গবলী স্বয়ং আবির্ভূত হয়েছিলেন। যেমন অযোধ্যার হনুমান গড়ি, রাজস্থানের মেহেন্দিপুর বালাজি মন্দির, যোধপুরের হনুমান মন্দির, দিল্লির রামপুরের শ্রী হনুমান মন্দির ইত্যাদি। বছরের যে কোনও সময় আপনি এই প্রাচীন এবং শক্তিশালী মন্দিরগুলি পরিদর্শন করতে পারেন। এখানে সারা দেশের বিখ্যাত ১১ হনুমান মন্দিরের একটি তালিকা দেওয়া হল।
১. প্রাচীন হনুমান মন্দির, দিল্লি
দিল্লির কনট প্লেসের হনুমান মন্দিরটি প্রাচীন এবং এটি মহাভারতের যুগের পাঁচটি মন্দিরের মধ্যে একটি বলে দাবি করা হয়। পবিত্র স্থানের বিগ্রহকে 'শ্রী হনুমানজি মহারাজ' নামে পুজো করা হয়। এই মন্দিরে বালক হনুমানের পুজো করা হয়।
২. জাখু মন্দির, হিমাচল প্রদেশ
হিমাচল প্রদেশের জাখু পাহাড়ে সিমলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে অবস্থিত এই মন্দির রামায়ণের সময়কার মন্দির। মনে করা হয়, রামায়ণ যুদ্ধের সময় ভগবান হনুমান এই স্থানটি পরিদর্শন করার পর মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। আর ২০১০ সালে, ভগবান হনুমানের একটি ১০৮ ফুট উঁচু মূর্তি উন্মোচন করা হয়।
৩. মহাবীর মন্দির, পাটনা
১৭৩০ সালে স্বামী বালানন্দ নামে একজন স্থানীয় সাধক এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় অনেক শরণার্থী পাটনায় আসেন। এই সময়েই মন্দিরটি গুরুত্ব লাভ করে। জম্মু ও কাশ্মীরের বৈষ্ণো দেবীর পরে এটি উত্তর ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক দর্শনীয় ধর্মীয় মন্দির বলে মনে করা হয়।
৪. শ্রী হনুমান মন্দির, সারাংপুর
এই মন্দিরটি ভারতের শীর্ষ হনুমান মন্দিরগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়, যা সারা দেশ থেকে ভক্তদের আকৃষ্ট করে। মন্দিরটি বিশ্বাস এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সন্ধানে ভক্তদের জন্য একটি সম্মানিত গন্তব্যস্থল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
৫. সংকট মোচন হনুমান মন্দির, বারাণসী
বারাণসীতে অসি নদীর তীরে অবস্থিত, এই মন্দিরটি ষোড়শ শতাব্দীতে রামচরিতমানসের রচয়িতা সন্ত গোস্বামী তুলসীদাস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় বলে মনে করা হয়। জনশ্রুতি আছে যে তুলসীদাস এই স্থানে ভগবান হনুমানের দর্শন পেয়েছিলেন।
৬. বালা হনুমান মন্দির, জামনগর
গুজরাটের জামনগরে রণমাল বা লক্ষোটা হ্রদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত, শ্রী প্রেম ভূষণজি মহারাজ ১৯৬৩-৬৪ সালে এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১ অগস্ট, ১৯৬৪ সাল থেকে এই মন্দিরে 'রাম ধুন' জপ করা হচ্ছে। ভক্তরা পালাক্রমে দিনরাত জপ করেন এই বিশেষ মন্ত্র। প্রকৃতপক্ষে, একটানা 'রাম ধুন' জপের জন্য গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও তালিকাভুক্ত হয়েছে মন্দিরটির নাম।
৭. বড় হনুমান জি মন্দির, সঙ্গম
এই ভূগর্ভস্থ মন্দিরটি রামায়ণের সময় থেকেই বিদ্যমান বলে মনে করা হয়। এখানে ভগবান হনুমানের মূর্তিটি ২০ ফুট লম্বা এবং ৮ ফুট প্রস্থ। এই মন্দিরে হনুমানজি হেলান দিয়ে শুয়ে আছেন। তাই এটিকে শয়নরত হনুমান মন্দিরও বলা হয়। মূর্তির অর্ধেক অংশ জলে নিমজ্জিত রয়েছে।
৮. নামক্কাল অঞ্জনেয়ার মন্দির, তামিলনাড়ু
মন্দির এবং মন্দিরের বিগ্রহ ৫ম শতাব্দী থেকে বিদ্যমান বলে মনে করা হয়। এই মন্দিরে ভারতের সবচেয়ে উঁচু হনুমান মূর্তিগুলির মধ্যে একটি রয়েছে, যার উচ্চতা ১৮ ফুট। বিশ্বাস করা হয় যে দেবী লক্ষ্মী এই স্থানে তপস্যা করেছিলেন।
৯. মেহেন্দিপুর বালাজি মন্দির, রাজস্থান
রাজস্থানে অবস্থিত এই মন্দিরে তিনজন দেবতা, ভগবান হনুমান (বালাজি নামেও পরিচিত), প্রেতরাজ এবং ভৈরব অধিষ্ঠিত। এই মন্দির বহু বছর ধরে খারাপ আত্মা দ্বারা আক্রান্ত ভক্তদের নিরাময় করতে সক্ষম বলে মনে করা হয়।
১০. হনুমানগড়ি, অযোধ্যা
মন্দিরটি দশম শতাব্দীতে নির্মিত বলে মনে করা হয়। জনশ্রুতি আছে যে ভগবান হনুমান এখানে একটি গুহায় থাকতেন এবং ভগবান রামের জন্মস্থান রামকোট রক্ষা করতেন। মূল মন্দিরে মা অঞ্জনার একটি মূর্তি রয়েছে, যার কোলে বালক হনুমান বসে আছেন।
১১. পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির, তামিলনাড়ু
মন্দিরটি রামায়ণের সময় থেকেই বিদ্যমান বলে মনে করা হয়। পঞ্চমুখী মূর্তির মুখমণ্ডলে ভগবান পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ এবং আকাশের দিকে মুখ করে আছেন। কিংবদন্তি রাম সেতু নির্মাণে ব্যবহৃত ভাসমান পাথর এই মন্দিরে রাখা আছে।