অনেকেই বলেন অপেক্ষা করলে নাকি ভালো ফল পাওয়া যায়, আর সায়কের জীবনে সেই কথাই যেন ভীষণ ভাবে সত্যি হয়ে ধরা দিল। প্রায় ১ বছর অপেক্ষার পর লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের মেগার হাত ধরে কামব্যাক করলেন সায়ক চক্রবর্তী। 'ফিডেল'-এর চরিত্রে মেগায় ধরা দিয়েছেন তিনি। কিন্তু অনিশ্চয়তা সঙ্গে অপেক্ষা, নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করে কাজে ফেরার যে উদ্যম, সবটা নিয়ে অভিনেতার অভিজ্ঞতাটা ঠিক কী রকম? এবার হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে সেই কথাই ভাগ করে নিলেন সায়ক।
সায়ক তাঁর জীবনের রোজনামচার খুঁটিনাটি তাঁর ভ্লগের মাধ্যমে অনুরাগীদের সঙ্গে ভাগ করে নেন। তেমনি এক মিনি ভ্লগে একবার সায়কের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কে। সেই সময় ভ্লগেই সায়ক লেখিকাকে জানিয়েছিলেন যে, গত ১০ বছর ধরে নাকি তিনি তাঁকে ম্যাসেজ পাঠান কাজের জন্য। তা শুনে, সায়কের ভ্লগেই লীনা কথা দেন অভিনেতাকে নিয়ে তিনি ভাববেন। এর পর অবশেষে লীনা তাঁর কথা রেখেছেন। তাঁর মেগায় বেশ আকর্ষণীয় একটি চরিত্র ‘ফিডেল’ হিসেবে অভিনেতাকে বেছে নিয়েছেন তিনি। লীনা মুম্বইতে থাকাকালীন নিজেই নাকি সায়ককে ফোন করে কাজের কথা জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: 'সম্পর্কটাকে বাঁচিয়ে রাখা…' বিচ্ছেদ থেকে পৃথার সঙ্গে দাম্পত্য নিয়ে আনকাট সুদীপ
সায়কের কথায়, ‘দিদি (লীনা গঙ্গোপাধ্যায়) আমাকে ফোন করেন, জানান তিনি একটি চরিত্রের জন্য আমাকে ভাবছেন, তবে এর জন্য আমাকে অডিশন দিতে হবে। তারপর শান্তনুদার নম্বর দেন। আমি ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে অডিশনে ডাকেন। ৩ রাউন্ড অডিশন দেওয়ার পর শেষ দিদির সঙ্গে আমার দেখা হয়, তখন তিনি নিজেই আমাকে আশ্বস্ত করেন যে আমি ওঁর মেগায় থাকছি।’
কিন্তু এই একটা বছর কীভাবে কাটল সায়কের? তাঁর ডেইলি ভ্লগ যদিও নিয়মিত দেখেছেন দর্শকরা। তবে সেটা বাদ দিয়ে, বাকি সময়টা কি অভিনেতা নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন? এই প্রসঙ্গে অকপট ভাবেই অভিনেতা বলেন, ‘আমি আলাদা করে নিজেকে খুব একটা তৈরি করিনি। ওই সময় আমি ভ্লগ বানিয়েছি আর অনেকটা অবসর যাপন করেছি। তারপর যখন দিদির কাছ থেকে ডাক এলো, তখন রাত জেগে আবার করে আমার অভিনয় ক্ষমতাটা ঝালিয়ে নিয়েছিলাম। সেই কয়েকটা রাত আমার জেগে কেটেছে।’
আরও পড়ুন: ‘কাজের থেকে বেশি পরিবারকে সময় দিয়েছি…’, ঋত্বিকের সঙ্গে দাম্পত্য নিয়ে অকপট অপরাজিতা
কিন্তু একটা বছর কি সত্যি কোনও অফার পাননি তিনি? এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে সায়ক বলেন, ‘একেবারে যে কোনও অফার পাইনি সেটা নয়। তবে যে ধরনের চরিত্রের কথা বলা হয়েছিল, তা না করলেও চলে। পাশাপাশি পারিশ্রমিকও এতটাই কম যে বলার মতো নয়।’
তবে কাজ না পাওয়া প্রসঙ্গে অভিনেতা বেশ কিছু মাস আগে জানিয়েছিলেন যে, তিনি ভ্লগ করেন বলেই হয়তো কাজ পাচ্ছেন না। কিন্তু এখন তিনি 'চিরসখা'র অংশ। ফলে এখন কি তাঁর চিন্তা ভাবনায় কোনও পরিবর্তন এসেছে? নাকি এখনও সায়ক তাঁর আগের ধারনাই পোষণ করেন? এই প্রসঙ্গে সায়ক জানান এটা নির্ভর করে যাঁরা কাজটা দিচ্ছেন তাঁদের উপর। অভিনেতার কথায়, ‘একটা সময় আমার এটা মনে হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু দিদি (লীনা গঙ্গোপাধ্যায়) জানেন আমি কী করি, আর তা জানার পরও তিনি আমাকে এই সুযোগটা দিয়েছেন। ইন্ড্রাস্টিতে তো সবাই সমান হন না। এটা যাঁরা কাজ দিচ্ছেন তাঁদের উপর নির্ভর করে। যেমন দিদি সবটা জেনেই আমাকে নিয়েছেন। আর আমার ভ্লগ করা নিয়েও ওঁর কোনও আপত্তি নেই।’
কিন্তু মেগার কাজ মানে তো অনেকটা ব্যস্ততা, তার মধ্যে কি ভ্লগ করতে দেখা যাবে সায়ককে? সঙ্গে সেটেও কি কোনও বিশেষ ভ্লগ বানানোর ইচ্ছে আছে তাঁর? প্রশ্নে সায়ক বলেন, ‘সেট থেকে ভ্লগ দেখা যাবে কিনা সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ বেশ কিছু নিয়ম থাকে তো। তবে আমি আমার ব্যক্তিগত যে সমস্ত ভ্লগ শেয়ার করতাম সেগুলো অবশ্যই করব।’
কিন্তু এত দিন পর তাঁকে অনুরাগীরা আবার পর্দায় দেখবেন। ফলে তাঁর চরিত্র কেমন হবে ধারাবাহিকে তা নিয়ে অনেকেই বেশ উৎসাহী। মেগায় তাঁর চরিত্র 'ফিডেল' প্রসঙ্গে সায়ক বলেন, ‘আমার চরিত্রে নাম ফিডেল। বাস্তব জীবনের মতো মেগাতেও আমি একজন ভ্লগার। তবে এই ‘অধরা মাধুরী’র সদস্য নই, পাড়ার ছেলে। তবে ফিডেল খুশির হাওয়া নিয়ে আসে। ফিডেল এমনই একটা চরিত্র যে, বাড়িতে খুব থমথমে পরিবেশেও সবার মুখে হাসি এনে দিতে পারে।’
সবটা মিলিয়ে 'চিরসখা'য় নতুন ভাবে ধরা দেবেন সায়ক। কিন্তু তাঁর জীবনের চিরসখা কে? প্রশ্নে অভিনেতা বলেন, ‘আমার কাছে ‘চিরসখা’র সংজ্ঞাটা হল যাঁদের কোনও বিকল্প হয় না। আর আমার জীবনেও এমন কিছু মানুষ আছেন। যেমন- আমার মা, আমার খুব কাছের বন্ধু ভাই সুকান্ত, আমার দিদি প্রেরণা আর আমার বৌদি। এঁদের আমি কখনওই ছাড়তে পারবো না।’
কিন্তু মেগায় 'চিরসখা' বলতে একটা অন্যরকম ভালোবাসা বা প্রেমের ছোঁয়া দেখানো হয়েছে। সায়কের জীবনে কি প্রেম আছে? প্রশ্নে একটু হেসে সায়ক বলেন, ‘আমার জীবনে এই মুহূর্তে কোনও প্রেম নেই। আর আমি এখন এটা নিয়ে ভাবতেও চাই না। আমার মূল লক্ষ্য এখন কাজ। আর কাজটা করে, মা-বাবাকে ভালো রাখা।’
প্রসঙ্গত, ২৭ জানুয়ারি থেকে রাত ৯ টায় স্টার জলসার পর্দায় শুরু হয়েছে ধারাবাহিকের সম্প্রচার। অপরাজিতা ঘোষ দাস ও সুদীপ মুখোপাধ্যায় রয়েছেন মুখ্য ভূমিকায়। তাঁরা ছাড়াও এই মেগায় দেখা যাবে অনুসূয়া মজুমদার, চন্দন সেন, লাভলী মৈত্র -সহ আরও অনেক বড় মাপের তারকাদের।