দুই বাংলা থেকে বলিউড, দক্ষিনী ইন্ড্রাস্টি থেকে ভোজপুরি সব জায়গায় জমিয়ে কাজ করছেন দর্শনা বণিক। সৌরভ দাসের সঙ্গে গুছিয়ে সংসারটাও করছেন। তবে এখনও মনের মতো কাজ কবে পাবেন ভেবে মন খারাপ হয় তাঁর। কিন্তু এবার ‘পরিচয় গুপ্ত’র হাত ধরে হয়েছে ইচ্ছে পূরণ। সেই সব পাওয়া না পাওয়ার গল্প নিয়ে হিন্দুস্থান টাইমস বাংলা-র সঙ্গে অকপট আড্ডায় ধরা দিলেন দর্শনা।
কখনও নিজের 'পরিচয় গুপ্ত' করে কারুর সঙ্গে দুষ্টুমি করেছেন?
দর্শনা: হ্যাঁ হ্যাঁ প্রচুর। পরিচয় গোপন করে ফোন করা। বন্ধুদের ব্যাগে ভুলভাল জিনিস রেখে দেওয়া বা কোনও বন্ধুর পিঠে কিছু আটকে দেওয়া এই সবই করেছি। আসলে ছোট বেলায় আমি খুব দুষ্টু ছিলাম।
কিন্তু ‘পরিচয় গুপ্ত’তে আপনার চরিত্রটা কেমন? দুষ্টু না মিষ্টি?
দর্শনা: সেটা বলা বেশ কঠিন। এই ছবিতে আমার চরিত্রের নাম স্নেহলতা সেন। এই চরিত্রটা যথেষ্ট সাহসী। নিজের মতামত নিজে জানাতে ভয় পায় না, খুব আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু কোথাও গিয়ে তার মধ্যে একটু দ্বিধাও রয়েছে, পাশাপাশি বেশ আনপ্রেডিক্টেবলও। সব মিলিয়ে এই চরিত্রটা ধূসর, একদম সাদা বা একদম কালো এই ভাবে বলাটা বেশ কঠিন। তবে ছবিটা করতে গিয়ে আমার একটা ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। ঋত্বিকদার (ঋত্বিক চক্রবর্তী) সঙ্গে আমার কাজ করা খুব ইচ্ছে ছিল অনেক দিন থেকে, সেটা অবশেষে হয়েছে।
ঋত্বিক চক্রবর্তী তো ইন্ড্রাস্টির একজন শক্তিশালী অভিনেতা, ওঁর সঙ্গে কাজ করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
দর্শনা: শুরুতে তো প্রচন্ড ভয় করছিল, কিন্তু মনে মনে খুব উত্তেজিতও ছিলাম। তবে প্রথম যেদিন আমাদের একসঙ্গে শুটিং করার কথা ছিল, সেদিন খানিকটা দেরী হয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আর একসঙ্গে দৃশ্যটা করা হয় না। পরের দিন যখন ঋত্বিকদার সঙ্গে শ্যুটিংটা করি, তখন খুব আনন্দ হচ্ছিল। আবার মনে মনে বেশ ভয়ও লাগছিল। তবে মানুষটা এত বড় মাপের অভিনেতা হয়েও কাউকে তা বুঝতে দেন না। সব সময় সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকেন। ঋত্বিকদা খুবই বিনয়ী। সবটা মিলিয়ে আমাদের কাজটা যে কীভাবে হয়ে গেল তা বুঝতেই পারিনি।
ওঁর থেকে কী কী শিখলেন?
দর্শনা: প্রথমত তিনি যেভাবে অভিনয় করেন সেটাই দেখে শেখার মত একটা বিষয়। তবে শুধু তাই নয়, যখন অন্য কারুর দৃশ্য চলে সেই সময়ও সেটে থাকেন। তাঁকে কিউ দিয়ে সাহায্য করেন।
২১ ফেব্রয়ারি তো পরিচয় গুপ্ত আসছে, আবার ওই একই দিনে সৌরভের (সৌরভ দাস) '১০ই জুন' মুক্তি পাছে, প্রেক্ষাগৃহে তো স্বামী-স্ত্রীর জোর টক্কর, এই নিয়ে কী বলছেন সৌরভ?
দর্শনা: না না, ওরকম কোনও ব্যাপার নেই। আমরা কিছুদিন আগেই জেনেছি যে আমাদের দু'জনের ছবি একই দিনের মুক্তি পাচ্ছে। শুনে বেশ মজাই লেগেছিল। আমরা চাই যেন এরকম বিষয় আরও হয়।
কিন্তু সেক্ষেত্রে দু'জনের ছবির প্রিমিয়ারও তো থাকবে একই দিনে…
দর্শনা: হ্যাঁ, আর আমরা দু'জনই দু'জনের প্রিমিয়ারে যাব।
তার মানে দুজনের মধ্যে বেশ ভালোই বোঝাপড়া রয়েছে…
দর্শনা: হ্যাঁ, আমার আর সৌরভ খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব রয়েছে। সৌরভ খুব দায়িত্বশীল। আমিও এখন দায়িত্ব নিতে শিখেছি। দু'জনে মিলে বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছে।
কিন্তু আপনাদের দু'জনকে অনেক দিন একসঙ্গে কোনও ছবিতে দেখা যায়নি…
দর্শনা: হ্যাঁ, আসলে এটা তো পরিচালক বা প্রযোজকদের উপর নির্ভর করে। আমরা দু'জনে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। কিন্তু আমরা কখনও একে অপরের বিষয়ে পরিচালক বা প্রযোজকদের বলি না, তাঁরা যদি আমাদের নিতে চান, তখন তাঁরাই সেটা জানান। আমিও কখনও সৌরভের নাম সাজেস্ট করি না, সৌরভও তাই করে। এটা সম্পূর্ণ পরিচালকের সিদ্ধান্ত। তবে দেবালয় ভট্টাচার্যের ছবি 'গোর্কির মা'তে এক সঙ্গে কাজ করেছি তাও একে অপরের বিপরীতে। তবে এক্ষেত্রেও আমরা কিছু বলিনি, সেটা একেবারেই দেবালয়দার সিদ্ধান্ত ছিল। তবে তাছাড়াও আমার আরও বেশ কিছু কাজ আসছে।
বাহ, গত বছরও তো পর পর আপনার অনেক কাজ মুক্তি পেয়েছে, ইন্ড্রাস্টিতে তো অনেকেই পর পর এত কাজ পান না…
দর্শনা: কোথায় আর এত কাজ। আসলে এগুলো পর পর করা ছিল তাই একের পর এক রিলিজ হচ্ছে। আর তাছাড়া আমি কোথাও গিয়ে এই ব্যস্ততাটা উপভোগও করি। কাজ না থাকলে মনে হয় কখন কাজ করব। তাছাড়া কখনওই মনে হয় না যে আমি সবটা পেয়ে যাচ্ছি। আমার এখনও মনে হয় আমি অনেক কিছুই পাইনি। আমার মাঝে মাঝে খুব মন খারাপও হয় এই নিয়ে। আমি ভাবি যে যাঁদের সঙ্গে কাজ করতে চাইছি বা যে ধরনের কাজ করতে চাইছি সেগুলো কবে আসবে আমার কাছ? সেই অপেক্ষাতেই আমি বিভিন্ন রকমের কাজ করতে থাকি। সব সময়ই আমার মনে হয় আমার এখনও অনেক কিছু করার, অনেক কিছু শেখার বাকি রয়েছে। তাছাড়া আমি মানুষটাও খুব ওয়ার্কহোলিক। তাই যখন বাংলায় কাজ করি না তখন বাংলাদেশ বা বলিউড কিংবা দক্ষিণী ছবি, বা ভোজপুরি ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করি।
কিন্তু আপনার ভোজপুরি মিউজিক ভিডিয়োটা নিয়ে তো বেশ একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, এই ব্যাপারগুলো কীভাবে দেখেন?
দর্শনা: হ্যাঁ, একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল ঠিকই। তবে গানটা দেখলে বোঝা যাবে যে ভোজপুরি বলতেই আমাদের মাথায় যে ধরনের ছবি ভেসে ওঠে এটা তাঁর থেকে অনেকটা আলাদা। এখন দর্শকরা আমাকে যেহেতু চিনতে শুরু করছেন তাই আমার উপরেও এর দায় বেশ কিছুটা রয়েছে। আমি কী দেখাচ্ছি বা তাঁরা আমার পক্ষ থেকে কী দেখছেন সে বিষয়গুলোও আমাকে মাথায় রাখতে হয়।
আমার কাছে যখন এই ধরনের গানের প্রস্তাব আসে, আমি প্রথমেই পোশাক কী হবে, গানের কথা কী থাকবে সবটাই আলোচনা করে নিয়ে তারপরই একটা কাজ করি। আর একটা বিষয় হচ্ছে যে, এক একটা জায়গার সংস্কৃতি, সেখানকার দর্শকদের চাহিদা এক এক রকমের হয়। ফলে যাঁরা এগুলো করেন তাঁদের ভালো-খারাপ বলার আমি কেউ নই। কিন্তু সেখানে তাঁদেরকে কেউ জোর করে এগুলো করান না, এটা তাঁরা নিজের ইচ্ছেতেই করেন। তবে আমি কী করব সেটাও আমি ঠিক করব। আমি দেখেশুনে তবেই একটা কাজ নিয়ে থাকি।
তবে এই এত বিতর্কের পরও শুনছিলাম আপনার একটি ভোজপুরি ছবি আসছে…
দর্শনা: হ্যাঁ, তবে শুরুতেই যেটা বললাম, আমরা ভোজপুরি মানেই যে রকম ভেবে ফেলি এই কাজটা কিন্তু অনেকটা আলাদা তার থেকে। এটা ‘রকি অর রানী কি প্রেম কাহানি’র একটা ভোজপুরি ভার্সন। এখানে একটি বাঙালি মেয়ের সঙ্গে অবাঙালি ছেলের প্রেম দেখানো হবে। তাছাড়া আমাদের যে টিমটা ছিল সেখানে দক্ষিনী ইন্ড্রাস্টি, মুম্বই, ভোজপুরি, পাঞ্জাবী সব ইন্ড্রাস্টির অভিনেতা অভিনেত্রীরা ছিলেন। তাছাড়াও আমাদের বাংলার খরাজ মুখোপাধ্যায়, লাবনী সরকারও রয়েছেন।
কিন্তু কোনও কাজ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কী কী মাথায় রাখেন?
দর্শনা: আমি কাজের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে চুজি। আমি সব সময় চেষ্টা করি যেন আমার একটা কাজ অন্য কাজের থেকে আলাদা হয়।
কিন্তু এখন শোনা যায় নাকি ফলোয়ার দেখে কাজ দেওয়া হয়, আপনিও তো স্যোশাল মিডিয়ায় বেশ অ্যাক্টিভ, এতে কি কাজের ক্ষেত্রে কোনও বাড়তি সুবিধা পান?
দর্শনা: আমার মনে হয় না যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার দেখে কাজ দেওয়া হয়। আমার কত ফলোয়ার আছে সেটা দেখে আজ পর্যন্ত আমায় কেউ কাজ দেয়নি। তাঁরা আমার অভিনয় দেখেই আমাকে নিয়েছেন। আসলে স্যোশাল মিডিয়ায় ফলোয়ার দেখে কিছু বিজ্ঞাপনের কাজ বা ইভেন্টের কাজ পাওয়া গেলেও ছবির ক্ষেত্রে তা হয় না বলেই আমার ধারনা। আমার মনে হয় না যে, শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার ফলোয়ার দেখে পরিচালকরা কোনও অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও চরিত্রের নেন।
অডিশনের মধ্যে দিয়ে একটা কাজ পাওয়া যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো দেখাও যায় কোনও এক ব্যক্তির বেশ ভালো অডিশন দিয়েছেন আবার তাঁর ফলোয়ারস সংখ্যাও অনেক তখন হয়তো তাঁকে অতিরিক্ত এক নম্বর দিয়ে রাখা হয়, কিন্তু এছাড়া আমার মনে হয় না এই বিষয়টা খুব বেশি সাহায্য করে বলে। কেউ ভীষণ ভালো অডিশন দিয়েছেন কিন্তু শুধু তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা কম বলে তাঁকে নেওয়া হয়নি এটা আমি অন্তত কখনও হতে দেখিনি। পরিচালকরা সব কিছু বিচার করেই কাউকে কাজে নেন। ওরকম ভাবে চট করেই মূল চরিত্রের কাজ দিয়ে দেন না।
কিন্তু অনেকেই আজকাল এমনটা দাবি করেন…
দর্শনা: হ্যাঁ, আজকাল অনেকেই ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে মজা করে। কিন্তু আমার মনে হয় আমি কাউকে বলতে পারি না যে সে কীভাবে রোজগার করবে। সোশ্যাল থেকে তাঁরা বেশ ভালোই অর্থ উপার্জন করেন। সেখানে এমন কিছু মানুষ আছেন যাঁদের সত্যি একটা সময় জীবনে খুব একটা আর্থিক সচ্ছলতা ছিল না। এখন স্যোশাল মিডিয়ায় কাজ করে তাঁরা নিজেদের সংসার চালাচ্ছেন। তাই সেই জায়গাটা নিয়ে আমার মনে হয় না কারও কিছু বলা উচিত বলে।
সবাই না হলেও বেশ কিছু অভিনেতা অভিনেত্রীকে দেখি তাঁরা নিজেরা যদি রিল না বানান, তবে যাঁরা রিল বানাচ্ছেন তাঁদের থেকে নিজেদের বড় মাপের তারকা মনে করেন। রিল বানাতেও কিন্তু যথেষ্ট খাটতে হয়।
হ্যাঁ, তবে আপনার কিন্তু প্রচুর রিল দেখা যায়, কিছুদিন আগেই সিসিএল (সেলেব্রিটি ক্রিকেট লিগ) -এর একটা রিল দেখলাম…
দর্শনা: হ্যাঁ, সিসিএল আমাদের ভালো লাগার একটা জায়গা। শুধু তো বাংলা নয়, আরও নানা ইন্ড্রাস্টির মানুষ এখানে আসেন। সকালে জলখাবার খাওয়ার সময় সকলের সঙ্গে সকলের দেখা হয়। ম্যাচের শেষে পার্টি থাকে, সেখানেও সবাই সবার সঙ্গে কথা বলে। একটা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আর একটা ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। তাছাড়া বিখ্যাত সব স্টেডিয়াম যেখানে ঐতিহাসিক সব ম্যাচ হয়েছে সেখানে বসে খেলা দেখার সুযোগ হয়। সবটা মিলিয়ে সত্যি খুব ভালো লাগে।
হ্যাঁ, আর একটা রাম লাড্ডুর রিল দেখলাম, সেটাও দিল্লিতে 'সিসিএল'-এর সময় না?
দর্শনা: হ্যাঁ হ্যাঁ
তা সেটা কি শুধু চোখে দেখাই হয়েছে, না চেখে দেখাও হয়েছে?
দর্শনা: না না, আমি চেখে দেখেছি। আমি আগে কখনও রাম লাড্ডু খাইনি। প্রথম বার খেলাম। আগেও দিল্লি গিয়েছিলাম তবে তখন খাওয়ার সুযোগ হয়নি। এবার আমি আর তৃণা দু'জনে মিলে খেয়েছিলাম। তবে তৃনা আগেও খেয়েছে। কারণ সম্ভবত দিল্লিতে ওঁর কলেজ বা ইউনিভার্সিটি ছিল। তবে রাম লাড্ডু খেয়ে আমার দিল্লির স্ট্রিট ফুড খাওয়ার ইচ্ছে আরও বেড়ে গিয়েছে। এরপর একবার দিল্লি ট্যুরে গিয়ে সব খাবার চেখে দেখার ইচ্ছে রয়েছে।
আপনি তো বেশ খাদ্যরসিক বোঝাই যাচ্ছে, আসলে নায়িকা মাত্রেই তো একটা কড়া ডায়েট মনে করেন অনেকে…
দর্শনা: না না, আমিও কড়া ডায়েটেই থাকি। কিন্তু তার মানে এটা না যে আমি কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানকার খাবার চেখে দেখব না। কখনও ইচ্ছা হলে পছন্দ মতো খাবারটা খাবো না। আসলে যে কোনও জায়গায় গেলে সেখানকার খাবার, সেখানকার সংস্কৃতি, সেখানকার মানুষ জনের সঙ্গে মিশে সেই জায়গাটাকে বোঝার চেষ্টা করি। সেটা আমার মনে হয় মানুষ হিসেবে আমাকে অনেকখানি সমৃদ্ধ করে। কিছু খেলেই ওজন বেড়ে যায় এমনটা নয়। তবে অবশ্যই সেটা বুঝে খাওয়া উচিত। একদিন অনিয়ম হলে আর একদিন সেটা ব্যালেন্স করে নিতে হয়। আসলে ডায়েট বলুন বা জীবন সব ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।